ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চতুর্থ দফার পরমাণু আলোচনা আজ রোববার ওমানের রাজধানী মাসকটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি শুক্রবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পরমাণু ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ইতিবাচক অগ্রগতির পথে রয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে আরাগচি বলেন, “আলোচনা এগিয়ে চলছে। আমরা যত এগোচ্ছি, তত বেশি পরামর্শ ও পর্যালোচনার প্রয়োজন হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখতে প্রতিনিধিদলগুলোর আরও সময় লাগছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা ইতিবাচক অগ্রগতির পথে রয়েছি এবং ধীরে ধীরে খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রবেশ করছি।”
আজকের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র শুক্রবার এই তথ্য নিশ্চিত করে।
স্টিভ উইটকফ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্রাইটবার্ট নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চান না। যুক্তরাষ্ট্র তাদের এই কথা আস্থায় নেবে।”
আগের তিন দফার মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা পরোক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চতুর্থ দফার এই আলোচনা মূলত ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ৩ মে। তবে ওমানের তথ্যমতে, ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেটি স্থগিত করা হয়।
ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ বদর আল–বুসাইদি শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, “ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ের পর নতুন তারিখ ঠিক করা হয়েছে। এই আলোচনা রোববার ওমানের রাজধানী মাসকটে অনুষ্ঠিত হবে।”
আলোচনার অংশ হিসেবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি শনিবার কাতার ও সৌদি আরব সফর করেন। সেখানে তিনি দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
২০১৫ সালে ইরান ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক নজরদারি নিশ্চিত করা হয়, যাতে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে। চুক্তির বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে এই চুক্তি থেকে সরে যান, যার ফলে চুক্তিটি কার্যত ভেঙে যায়। এরপর থেকেই দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং আলোচনা আবার শুরু করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
চতুর্থ দফার আলোচনায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু উত্তেজনা প্রশমনে একটি কার্যকর সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও আলোচনা পরোক্ষভাবে হচ্ছে, তবুও ওমানের মধ্যস্থতায় এই সংলাপ এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অগ্রগতি হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ