বিএনপি নেতাকর্মীরা গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে আন্দোলন চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। সোমবার বিকেলে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে এই মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনে চলমান আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে করা হচ্ছে।
উপদেষ্টার ১০ দফা যুক্তি
ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া আন্দোলন নিয়ে ১০টি দফায় তাঁর যুক্তি তুলে ধরেন:
১. আদালতের রায় লঙ্ঘন:
উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন কমিশন ট্রাইবুনাল হাইকোর্টের অবৈধ ঘোষণা করা সংশোধিত আবেদন বিবেচনায় নিয়ে রায় প্রদান করেছে, যা আদালতের রায় লঙ্ঘন করে।
২. একতরফা রায়:
তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশন নিজেই শুনানিতে অংশ নেয়নি এবং আপিলও করেনি, ফলে রায় একতরফা হয়েছে।
৩. গেজেট প্রকাশে অনিয়ম:
আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার আগেই এবং দুটি লিগ্যাল নোটিশ উপেক্ষা করে রাত ১০টায় গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
৪. স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা নেই:
মামলায় স্থানীয় সরকার বিভাগ পক্ষভুক্ত ছিল না, এবং রায়েও এ বিভাগের জন্য কোনো নির্দেশনা নেই।
৫. বিচারাধীন রিট পিটিশন:
শপথ গ্রহণ না করার কারণে নির্বাচন কমিশনকে বিবাদী করে দায়েরকৃত রিট এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
৬. ট্রাইবুনালের দ্বৈত অবস্থান:
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের একই ধরনের মামলায় হাইকোর্টের রায় মেনে ট্রাইবুনাল আবেদন খারিজ করেছিল, যা বর্তমান অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক।
৭. মেয়াদ নিয়ে জটিলতা:
মেয়র হিসেবে কতদিন দায়িত্ব পালন করা যাবে, বা আদৌ মেয়াদ আছে কি না—সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।
৮. আইনি জটিলতা স্পষ্ট:
নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব চিঠিতে বলা হয়েছে “কোনপ্রকার আইনি জটিলতা না থাকলে ব্যবস্থা নিতে,” অথচ বর্তমানে রায় বিতর্কিত, রিট বিচারাধীন এবং লিগ্যাল নোটিশ বিবেচনাধীন রয়েছে।
৯. মতামত চাওয়া হয়েছে:
এই জটিলতা নিরসনে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে।
১০. রাজনৈতিক বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ:
আওয়ামী আমলের নির্বাচনগুলোকে বৈধ বললে বর্তমান পরিস্থিতির সুরাহা হতে পারে, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বীকৃতি ছাড়া সরকারের পক্ষে একতরফা কিছু বলা যৌক্তিক নয়।
আসিফ মাহমুদ বলেন, নগর ভবন বন্ধ করে আন্দোলনের ফলে সিটি কর্পোরেশনের দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, নাগরিক দুর্ভোগ বাড়ছে। তিনি দাবি করেন, এটি কোনো সাধারণ জনগণের কর্মসূচি নয় বরং বিএনপি এবং তাদের অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপের নির্দেশেই বাস্তবায়িত হচ্ছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, “ইশরাক হোসেনের এই আক্রমণাত্মক ও অপমানজনক কার্যকলাপের পেছনে ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো দোষ দেখছি না।” তিনি অভিযোগ করেন, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এই কর্মসূচি পরিকল্পিতভাবে দলীয়ভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে ইশরাকের সমর্থকরা আজ ষষ্ঠ দিনের মতো নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। মূল ফটকে তালা লাগিয়ে তাঁরা দাবি করছেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের হস্তক্ষেপেই আদালতের রায় এবং নির্বাচন কমিশনের গেজেট থাকা সত্ত্বেও শপথ নিতে পারছেন না ইশরাক হোসেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র নিয়ে চলমান এই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক টানাপোড়েন আগামী দিনে আরও জটিল আকার নিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সব পক্ষের উচিত হবে আইনগত ও সাংবিধানিক পন্থায় সমাধানের পথ খোঁজা, যাতে জনদুর্ভোগ না বাড়ে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল থাকে।